মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

কোনো প্রকার অভিজ্ঞতা ছাড়াই পড়ালেখার পাশাপাশি আয় করার ৭টি জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত উপায়

পড়ালেখার পাশাপাশি অনলাইনে টুকিটাকি কাজ করে খুব সহজেই নিজের পকেট খরচটুকু চালানো সম্ভব। এমন অনেক অনলাইন ভিত্তিক কাজ আছে যেগুলো স্টুডেন্টদের কথা মাথায় রেখেই তৈরী করা হয়েছে। এমন অনেক ওয়েব সাইট আছে যেখানে ছাত্রদের লেখাপড়ার পাশাপাশি আয় করার সুযোগ দিয়ে থাকে। সেইসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করে, পরিশ্রম করার মাধ্যমে অনলাইন থেকে আয় করা সম্ভব।


আজকাল অনলাইনে প্রচুর চটকদার বিজ্ঞাপন দেখা যায়, যেখানে খুব অল্প সময়ে অনেক বেশি পরিমাণে আয় করার স্বপ্ন দেখিয়ে থাকে। এইসব বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই আবার আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে এগুলো চমৎকারভাবে ফেঁদে রাখা ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই নয়। কিছু অসৎ লোক নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এমন ফাঁদ পেতে বসে থাকে। তাদের মূল লক্ষ্যই থাকে ছাত্রছাত্রীরা যারা অল্প সময়ের মধ্যে কোনো প্রকার পরিশ্রম ছাড়াই ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখে।


তাই সময় থাকতেই সাবধান হওয়াটা প্রয়োজন। মনে রাখা উচিত পড়ালেখা ছেড়ে অনলাইনে সারাদিন ধরে কাজ খুঁজলেও এমন কোনো কাজ পাওয়া যাবে না যেটার মাধ্যমে আপনি রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাবেন। বরং ছোটখাটো কোনো জবের জন্যও মিনিমাম এডুকেশনাল স্কিল থাকতে হবে। আর লেখাপড়া শুধু টাকা কামাই করার জন্যই নয় বরং বিবেকবান একজন মানুষ হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার জন্যও আবশ্যক। তাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে অনলাইন জব খোঁজা কোনো কাজের কথা নয়।


তো, চলুন এবার পরিচিত হওয়া যাক জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত কিছু মাধ্যমের সাথে যারা আপনার পকেটখরচটুকু চালাতে সাহায্য করবে।


কোনো প্রকার অভিজ্ঞতা ছাড়াই পড়ালেখার পাশাপাশি আয় করার ৭টি জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত  উপায়

#১ ব্লগিং করে আয়

ব্লগিং বর্তমানে আয় করার অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। আর মজার ব্যাপার হল কোনো প্রকার ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই ব্লগিং শুরু করা যায়। একটি ব্লগ তৈরী করতে আধ ঘন্টারও কম সময় লাগে। তবে হ্যা, ব্লগিং করে আয় করাত জন্য ব্লগে কোয়ালিটি কনটেন্ট অর্থাৎ মানসম্মত আর্টিকেল থাকতে হবেই।


একটি আর্টিকেল লিখতে ঘন্টাখানিক লাগতে পারে। ফলে প্রতিদিন অল্প কিছু সময় খরচ করেই ব্লগিং শুরু করা সম্ভব। ব্লগিং তাই লেখাপড়ায় তেমন কোনো হার্ম করে না উল্টো এটি আউটনোলেজ বাড়ানোর চমৎকার একটি উপায়।


যদি লিখতে ভালবাসেন তাহলে আর দেরী না করে এখনই ব্লগিং শুরু করুন। ব্লগিং করার সাবজেক্ট হিসেবে নিজের প্রিয় কোনো বিষয় বেছে নিয়ে লিখতে বসে পড়ুন আর ভাল কোনো এডভার্টাইজিং কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে ঘরে বসেই আয় করুন।


আরো পড়ুন:


#২ আর্টিকেল লিখে আয়

অনেক ওয়েবসাইট-ই আর্টিকেলের বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমানে অর্থ দিয়ে থাকে। আবার এমন অনেক প্লার্টফর্ম আছে যেখানে আপনি নিজের আর্টিকেল বিক্রি করতে পারবেন। মোটামুটি ৫০০ - ৭০০ শব্দের আর্টিকেলের জন্য তারা আপনাকে ৫ থেকে ২০ ডলার করে দিবে। স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় তাই আর্টিকেল লিখে আয় করাটা বেশ জনপ্রিয়।


তবে শর্ত হল তথ্যবহুল সহজ ভাষায় গুছিয়ে আর্টিকেল লিখতে হবে। আর যেহেতু ইংরেজিতে লিখতে হবে তাই এই ভাষায় দক্ষতা থাকা লাগবে-ই। যদি লেখালেখিটাকে নিজের আয়ত্তে আনতে পারেন তাহলে আর্টিকেল লিখার কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে এবং এর মাধ্যমেই বেশ ভালো পরিমানে আয় করা সম্ভব হবে।


#৩ মাইক্রোজবস

অনলাইনে ছোট ছোট কাজ করে খুব সহজেই আয় করা যায়, যেগুলো মাইক্রোজবস নামে পরিচিত। মাইক্রোজবস প্লার্টফর্মের সবচেয়ে ভাল দিক হল এখানে এত বেশি রকমের কাজ পাওয়া যায় যে বোর হওয়ার কোনো চান্সই নেই। আর সবচেয়ে খারাপ দিক হল ক্লায়েন্ট কাজে অসন্তুষ্ট হলে আপনি কোনো টাকাই পাবেন না।


মাইক্রোটাস্কগুলো কমপ্লিট করতে মোটামুটি বিশ থাকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় লাগে। প্রতিটি কাজের জন্য দুই থেকে ত্রিশ ডলারের মত পাবেন। তবে দক্ষতার সাথে কাজ শেষ করার ওপরই আপনার সফলতা নির্ভর করছে।


#৪ ই-কমার্স পেজ তৈরী

মোটামুটি আমরা সবাই ই-কমার্স সাইটের সাথে পরিচিত। ই-কমার্স পেজ এই সাইটেরই আরেকটি রূপ বলা যেতে পারে। তবে এখানে সাইটের বদলে থাকবে একটি ফেসবুক পেজ।


ই-কমার্স পেজকে যদি সত্যিকারের একটি দোকানের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে এখানে পেজের এডমিন হল দোকানদার এবং ভিজিটর হল ক্রেতা। এডমিন তার স্টকে থাকা বিভিন্ন পণ্যের ছবি এবং ডিটেইলস পেজে পোস্ট করবেন এবং ক্রেতারা মেসেজের মাধ্যমে এডমিনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে কাঙ্ক্ষিত পণ্যের অর্ডার দিবেন। বিকাশ বা অন্য কোনো মাধ্যমে অর্থ পাওয়ার পর কুরিয়ারের মাধ্যমে বা হাতে হাতে এডমিন পণ্য ক্রেতার ঘরে ডেলিভার করবেন।


ই-কমার্স পেজ তৈরী করে আয় করাটা খানিকটা জটিল মনে হতে পারে তবে এর মাধ্যমে অল্প সময়েই ব্যবসা জমিয়ে ফেলা যায়। ফেসবুক এমন একটি মাধ্যম যেখানে আপনি খুব সহজেই ক্রেতা খুঁজে নিতে সক্ষম হবেন। ফলে এই দিকে ঝুঁকে লাভবান হওয়া সম্ভব।


#৫ ক্যাপচা সমাধান করে আয়

ক্যাপচার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। একজন ইন্টারনেট ইউজার প্রায় প্রতিদিনই ক্যাপচা সলভ করে থাকে। এই কাজটি সহজ হওয়ার কারনেই এর মাধ্যমে অনেক বেশি পরিমানে আয় করা সম্ভব নয়।


তবে কিছু ট্রিকস কাজে লাগিয়ে ক্যাপচা সলভ করে ভালো পরিমানে আয় করা সম্ভব। এজন্য শুরুর দিক থেকে বেশ মনোযোগের সাথে কাজ করতে করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ক্যাপচা যেন ভুল না হয়। কারন ভুল ক্যাপচা এন্ট্রি করলে একাউন্ট থেকে অনেক সময় টাকা কেটে নেয়া হয়। শুরুর দিকে এক ডলারের জন্য পাঁচশো থেকে এক হাজার ক্যাপচা সলভ করতে হবে। তবে পরে একাউন্ট আপগ্রেড করে কম ক্যাপচা সলভ করেও বেশি আয় করা যাবে।


#৬ ছবি বিক্রি করা

ছবি তুলতে ভালোবাসেন? সামনে যা পান তা-ই ক্যাপচার করছেন? ওয়েল, তাহলে ছবিগুলো বিক্রি করে আয় করতে শুরু করুন।


অনলাইনে এমন প্রচুর ওয়েবসাইট আছে যেখানে আপনার তোলা ছবিটি সঠিক মূল্যে বিক্রয় করতে পারবেন। বলাবাহুল্য এজন্য ছবির মান খুবই উন্নত হতে হবে। বিভিন্ন প্রজেক্ট ডেভেলপ করতে ভাল মানের অনেক ছবি লাগে। তাই ডেভেলপাররা প্রচুর ছবি ক্রয় করে থাকে। সুতরাং আয়ের জন্য এদিকটায় নজর দেয়া যেতেই পারে।


#৭ পেইড-টু-ক্লিক

অনলাইন থেকে আয় করার জন্য আমি এই মাধ্যমটাকে বেশি গুরুত্ব দিব না। কারন এতে আয় অনেক কম হবে। তবে, কিছু টেকনিক খাটিয়ে আয়ের পরিমানটা খানিকটা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।


পেইড-টু-ক্লিক হল বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে আয়। এখানে আপনাকে কিছু বিজ্ঞাপন দেয়া হবে ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেগুলোতে ক্লিক করতে হবে। প্রতিটি বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার জন্য খুব অল্প পরিমান অর্থ দেয়া হবে এবং একই বিজ্ঞাপনে ২৪ বা ৪৮ ঘন্টায় মাত্র একবার ক্লিক করা যাবে। এভাবে প্রতিদিন মোটামুটি .৫০ থেকে ৫ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। তবে একাউন্ট আপগ্রেড করে এবং রেফার কিনে আয়ের পরিমান বাড়ানো সম্ভব।


উপসংহার

অনলাইন থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা আয় করুন - এই টাইপের বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন। অথচ সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে হাজার হাজার না হলেও প্রতিদিন অন্তত কিছুটা আয় করা সম্ভব। হয়ত আপনার জীবনের প্রথম ইনকামটা উপরের সাতটির কোন একটি থেকেই চলে আসবে…..! তো, এখনই একটিকে বাছাই করুন আর কাজে লেগে পড়ুন, আমার পক্ষ থেকে অল দ্যা বেস্ট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন