নিজের মতামত প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হল ব্লগিং। আর এর জন্য যদি টাকা পাওয়া যায় তাহলে তো আর কথাই নেই! আপনার যদি অল্প সল্প লেখালেখির অভ্যাস থাকে এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে টুকটাক ধারণা থাকে তাহলে আজই শুরু করে দিতে পারেন ব্লগিং এবং নিজের শখের ব্লগকে পরিণত করতে পারেন আয় করার অন্যতম মাধ্যমে।
একটি ব্লগ থেকে মাসে আট থেকে আশি হাজার বা তার চেয়েও বেশি আয় করা সম্ভব। আর সবচেয়ে দারুন ব্যাপারটা হল আপনি চাইলে কোনো প্রকার ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই শুরু করতে পারেন। তবে হ্যা, একটি ব্লগকে সত্যিকারের ব্লগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাতে প্রচুর খাটতে হয় এবং এখানে ভুল ভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।
তবে তাই বলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। ব্লগিং করে আয় করার স্বপ্নটা পূরণ করা সম্ভব যদি আপনি সৎ থেকে পরিশ্রম করতে পারেন। ব্লগিং শেখার জন্য গুগলিং না করে বরং শুরু করে দেয়াই ভাল। প্রত্যেক সফল ব্লগারের পেছনের গল্পটি মৌলিক এবং আপনার গল্পটি কেমন হবে তা কেউ বলতে পারবে না।
তাই যদি ভেবে থাকেন ব্লগিং শুরু করবেন তা হলে এখনই মাঠে নেমে পড়ুন। এই আর্টিকেলে আমি বলব কিভাবে ব্লগিং শুরু করবেন এবং নিজেকে সফলতার সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে যাবেন। গামছাবেধে মাঠে নামার পূর্বে তাই এই লেখায় খানিকটা চোখ বুলিয়ে নিতেই পারেন।
ব্লগ কি?
হ্যা, আমরা সবাই এর সাথে পরিচিত! তাই আমি জানি এইটুকু কেউ পড়বে না!
ব্লগ হল এক প্রকার ওয়েবসাইট যেখানে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর লেখা প্রকাশিত হয় এবং পাঠকরা লেখাগুলো সম্পর্কে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। তাই ব্লগের প্রাণ হল মানসম্মত লেখা।
যারা ব্লগে লিখে থাকে তাদের বলা হয় ব্লগার। ব্লগারদের আজকাল সাংবাদিকদের সাথে তুলনা করা হয়। তাই সম্মানের দিক থেকে ব্লগিং অন্য কোনো পেশার থেকে কোনো অংশেই কম নয়। ব্লগিং যেমন মুক্তভাবে নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়, তেমনি তৈরী করে আয় করার অফুরন্ত সুযোগ।
ব্লগিং কেন?
বা বলা যায় ব্লগিং করে সত্যিই কি আয় করা সম্ভব?
একটি নয়, ব্লগিং করার পেছনে কয়েকটি কারন থাকতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারনগুলো নিচে দেয়া হল।
অনলাইন থেকে আয়:
ব্লগিং করে আয় করাটা নতুন কিছু নয়। একটি ব্লগ থেকে প্রচুর আয় করা সম্ভব যদি ব্লগটিকে সঠিক নিয়মে সাজানো হয়। ভাল মানের কন্টেন্ট লিখে ব্লগিং করে বাসায় বসেই বেশ ভাল পরিমানেই আয় করা যায়। আর যদি ব্লগটি যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে যায় তাহলে এটিই হতে পারে আপনার আয় করার প্রধান মাধ্যম।
নিজের মতামত জানানো:
ইন্টারনেটের শুরুর দিক থেকেই ব্লগিং নিজের মতামত জানানোর অন্যতম মাধ্যমে পরিনত হয়েছে। ব্লগিং শুধু আপনাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতাই দেয় না বরং এটি আপনাকে অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেও শেখায়।
নিজেকে জানার সুযোগ:
ব্লগিং আপনাকে নিজ সম্পর্কে ধারণা দিবে। এর মাধ্যমে আপনি নিজেকে আবিস্কার করতে পারবেন সম্পূর্ণ নতুনভাবে। হয়ত আপনি নিজেও জানেন না এমন কিছু আপনারই ভেতর থেকে ব্লগিং আপনার সামনে তুলে ধরবে।
নতুন কিছু শেখা:
ব্লগিং অর্থ শুধু শেয়ারিং-ই নয় বরং লার্নিং-ও। একটি পোস্ট লিখতে গেলে প্রচুর রিসার্চের প্রয়োজন হয়। জানতে হয় খুঁটিনাটি অনেক তথ্য। তাই ব্লগিং প্রতিদিনই ব্লগারকে নতুন কিছু শেখায়।
একটি কমিউনিটি তৈরি:
ব্লগিং করতে গিয়ে লক্ষ্য করবেন কিছু পাঠক আপনার লেখা নিয়মিতভাবে পড়ছে ও তাদের মতামত জানাচ্ছে। তাদের মতামতের প্রত্যুত্তর দিতে গিয়ে আপনি একটি অনলাইন ভিত্তিক কমিউনিটি তৈরি করে ফেলবেন যা ফেসবুক বা টুইটারের মত সামাজিক যোগাযোগ সাইটে তৈরি করা ফ্রেন্ডশিপের থেকেও আরো বেশি উষ্ণ।
কি কি লাগবে?
যা যা লাগবে তার সবই আপনার হাতের কাছেই আছে!
ব্লগিং শুরু করার জন্য তেমন কিছুর প্রয়োজন নেই। ভাল স্পিডের ইন্টারনেট, স্মার্ট ডিভাইস, প্রতিদিন ঘন্টাখানিক সময় হলেই যথেষ্ট। শুরুতে কিছু অর্থ ইনভেস্ট করলে ভাল তবে না করলেও চলে। দুই একটু লেখালেখির অভ্যাস থাকলে মন্দ হয় না তবে যদি না থাকে তাতেও তেমন কোনো দোষ নেই। ব্লগিং করতে করতে আর কিছু হোক বা না হোক লেখালেখির অভ্যাসটা গড়ে ওঠে বেশ ভালভাবেই।
কিভাবে ব্লগিং শুরু করব?
সহজ কিছু স্টেপের মাধ্যমে যে কেউ ব্লগিং শুরু করতে পারে!
অনেক তো জানলেন ব্লগিং সম্পর্কে এবার চলুন তাহলে শুরু করা যাক। ব্লগিং শুরু করতে পারেন অল্প কিছু ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে। তবে যদি ইনভেস্ট না করতে চান তাতেও দোষ নেই। ব্লগিং এখন ফ্রিতেই করা সম্ভব।
কিভাবে ব্লগিং শুরু করবেন তা আমি ধাপে ধাপে তুলে ধরলাম। আপনাকে যে সবগুলো ধাপই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই। চাইলে আপনি এক বা একাধিক ধাপ স্কিপ করে পড়তে পারেন, বিশ্বাস করুন আমি একটুও মাইন্ড করব না।
ধাপ - ০১: ডোমেইন নির্বাচন
নিশ
আপনি কি বিষয়ের ওপর ব্লগিং করতে চান? খেলাধুলো, বইপত্র, মুভি নাকি রিভিউ? যেই বিষয়ের ওপর ব্লগিং করতে চান সেটাই হচ্ছে নিশ। একটি ব্লগের একাধিক নিশ থাকতে পারে। তবে প্রফেশনালরা একটি নিশ নির্বাচন করার পরামর্শই দিয়ে থাকেন। যেমন আপনার প্রিয় কোনো বিষয় বা অভিজ্ঞতা একটি আদর্শ নিশ হতে পারে।
ডোমেইন
ডোমেইন হল আপনার সাইটের এড্রেস। যেমন Google.com, Bing.com ইত্যাদি। ডোমেইন নির্বাচনের ক্ষেত্রে খানিকটা সৃজনশীল হতে হয়। খেয়াল রাখতে হয় যেন নিশের সাথে আপনার ডোমেইনটি স্যুট করে।
ডোমেইন এক্সটেনশন
ডোমেইনের শেষের অংশই ডোমেইন এক্সটেনশন। যেমন .com, .net ইত্যাদি। সাধারণত ডট কম (.com) এক্সটেনশন বেছে নিতেই সাজেস্ট করা হয়।
রেজিস্ট্রেশন
নিশ ও ডোমেইন ঠিক করার পর এবার সেটাকে রেজিস্ট্রেশন করার পালা। তবে দেখতে হবে ডোমেইনটি এখনও এভেলেবেল আছে কি না। থাকলে আপনি সেটা কিনে নিতে পারবেন। না থাকলে আপনার দুর্ভাগ্য; নতুন কোনো ডোমেইন নির্বাচন করতে হবে।
খরচ
ইন্টারনেটে প্রচুর ওয়েবসাইট আছে যেখান থেকে আপনি আপনার ডোমেইন কিনতে পারবেন। কিছু কিছু সার্ভিস প্রোভাইডাররা প্রতি মাসে আপনার কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমানে অর্থ নেবে আবার কিছু কিছু প্রোভাইডার বারো মাসের খরচ একসাথে নিবে। ডোমেইনের দামের মধ্যেও হেরফের আছে। তেমনি সাপোর্টের দিকটাও মাথায় রাখতে হবে। আবার কিছু কিছু ডোমেইন (যেমন .TK, .ML) ফ্রিতেই পাওয়া যায়। সেগুলোও ট্রাই করতে পারেন।
যেখান থেকে কেনা যাবে
সাবডোমেইন
যদি ডোমেইন না কিনতে চান তাহলে সাবডোমেইন-ই হবে আপনার ব্লগের এড্রেস। সাধারণতে হোস্টিং প্রোভাইডাররা ফ্রিতেই সাবডোমেইন অফার করে থাকে। যেমন 2techjournal.blogspot.com.
ধাপ - ০২: হোস্ট নির্বাচন
হোস্টিং
আপনার ব্লগটিকে অনলাইনে স্থান দিতে প্রযোজন হোস্টের। হোস্ট হল এমন একটি সার্ভার (বা কম্পিউটার) যেখানে আপনার ব্লগটির সকল ফাইল থাকবে এবং অনলাইন থেকে যে কেউ সেগুলো এক্সেস করতে পারবে। বিভিন্ন কোম্পানি হোস্টিং স্পেস ভাড়া দিয়ে থাকে। তারা আপনার ব্লগটিকে তাদের সার্ভারে রাখবে এবং এর জন্য আপনাকে প্রতি মাসে বা বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ গুনতে হবে।
ডেস্কস্পেস ও ব্যান্ডউইথ
একটি ব্লগ তৈরি করতে সাধারণত এক থেকে আড়াই জিবির মতো স্পেস হলেই চলে। আপনার ব্লগটাতে কেমন ট্রাফিক আসবে তার ওপর নির্ভর করে ব্যান্ডউইথ কিনতে হবে। শুরুর দিকে দশ জিবি ব্যান্ডউইথ-ই যথেষ্ট। ডেস্কস্পেস ও ব্যান্ডউইথের ওপর নির্ভর করবে আপনার হোস্টিং খরচ।
সেরা কিছু হোস্টিং
ব্লগিং সফটওয়্যার
হোস্টিং সার্ভারে আপনার ব্লগটিকে রান করতে একটি সফটওয়্যারের প্রয়োজন হবে। একটি কম্পিউটারকে সচল করতে হলে যেমন ওপারেটর সিস্টেম লাগে ঠিক একই ভাবে একটি ব্লগকে রান করাতে লাগে নির্দিষ্ট সফটওয়্যার। জনপ্রিয় ব্লগিং সফটওয়্যারের মধ্যে ওয়ার্ডপ্রেস, গোস্ট, দ্রুপাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ইন্সটলেশন
হোস্টিং নির্বাচন করার পর আপনাকে একটি ব্লগিং সফটওয়্যার বাছাই করতে হবে। যেহেতু প্রায় ২৯% ওয়েবসাইটই ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি তাই এই সফটওয়্যারটার ওপর নিঃসন্দেহে ভরসা রাখতে পারেন। বাছাই করার পর সফটওয়্যারটির জিপ ফাইল ডাউনলোড করতে হবে এবং হোস্টিং সার্ভারে আপলোড করে আনজিপ করতে হবে। এরপর আপনার ডোমেইন বা সাবডোমেইন এড্রেসবারে লিখলেই সফটওয়্যারটির ইন্সটলেশন পেজ আসবে। পেজে সঠিক তথ্য ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে সাবমিট করতে হবে। অনেক হোস্টিং প্রোভাইডার ওয়ান ক্লিক ইন্সটল সেবা দিয়ে থাকে যার মাধ্যমে মাত্র একটি ক্লিক করেই সফটওয়্যারটি ইন্সটল করা সম্ভব।
ব্লগিং প্লার্টফর্ম
অনলাইনে বেশ কিছু প্লার্টফর্ম আছে যেখানে বিনামূল্যে ব্লগ তৈরি করা যায়। এই সব প্লার্টফর্মে ব্লগ তৈরি করতে আলাদা কোনো হোস্টিং লাগে না। বরং প্লার্টফর্মটাই হোস্ট হিসেবে কাজ করে। এগুলোর মধ্যে সহজেই ব্লগিং শুরু করা যায়। গুগোলের ব্লগার একটি জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য ব্লগিং প্লার্টফর্ম।
ধাপ - ০৩: ব্লগ নির্মান
থিম বা টেম্পলেট
আপনার ব্লগটিকে চমৎকার ডিজাইন দিতে থিম বা টেম্পলেটের কোনো বিকল্প নেই। অনলাইনে প্রচুর ফ্রি থিম আছে যেগুলো থেকে আপনার পছন্দেরটি বাছাই করতে পারেন। অথবা একজন প্রফেশনালকে হায়ার করতে পারেন থিম তৈরি করে দেয়ার জন্য। আর যদি আপনি ওয়েব ডিজাইনার হোন, তাহলে নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন।
লোগো তৈরি
ভিজিটরদের মনে প্রভাব ফেলতে মাইন্ডব্লয়িং একটি লোগোর প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই জানি। একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার ভাড়া করে লোগো তৈরি করে নিতে পারেন। আর যদি লোগো তৈরি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা থাকে তাহলে নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন।
পেজ তৈরি
প্রথমদিকে যেসব পেজ তৈরি করতে হবে সেগুলো হল যোগাযোগ পেজ (Contact Us), আমাদের/আমার সম্পর্কে (About Us/Me), সাধারণ নিয়মাবলী (TOS) ইত্যাদি। এগুলো নিজ হাতে তৈরি করে ফেলবেন।
ধাপ - ০৪: পোস্ট লিখা
তো, আপনি ডোমেইন কিনেছেন, হোস্টিং নিয়েছেন, ব্লগ ডিজাইনিং-ও করেছেন এবং এবার পোস্ট করতে চলেছেন। পোস্ট করা হল ব্লগিং এর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই একে হেলাফেলা করা উচিত না। বরং এই ধাপ যদি সঠিকভাবে শেষ করতে পারেন আপনার সফল হওয়ার সম্ভবনা বহুগুন বেড়ে যাবে।
কিছু পরামর্শ
- যে বিষয়ে ভাল জানেন এবং আপনার ধারণা সহজভাবে লিখতে পারবেন, সেই বিষয় নিয়ে লিখতে শুরু করুন।
- সহজ ভাবে নিজ ভাষায় সংক্ষেপে লিখুন। অযথা পোস্ট অতিরিক্ত বড় করা থেকে বিরত থাকুন।
- পোস্টকে আকর্ষণীয় করতে ছবি যুক্ত করুন। সম্ভব হলে নিজে ছবি তৈরি করুন অথবা কপিরাইট ফ্রি ইমেজ ব্যবহার করুন। ভুলেও কপিরাইটেড ইমেজ ব্যবহার করবেন না।
- লেখাকে আরো আকর্ষণীয় করতে বোল্ড, ইটালিক, হেডট্যাগ ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
- সংক্ষিপ্ত অথচ তথ্যবহুল আকর্ষণীয় একটি টাইটেল লিখুন।
- যদি লেখায় এক্সপার্ট হোন এবং ভাল মানের আর্টিকেল লিখতে পারেন তাহলে এক থেকে দুই হাজার শব্দের মধ্যে পোস্ট লিখুন। যদি লেখার অভ্যাস না থাকে তাহলে ৫০০ - ৮০০ শব্দের মধ্যে সংক্ষেপে গুছিয়ে পোস্ট লিখুন। তবে এসইওর স্বার্থে ৩০০ শব্দের নিচে আর্টিকেল লিখা থেকে বিরত থাকুন।
ধাপ - ০৫: প্রোমোট করা
এবার তাহলে আপনার ব্লগটিতে পাঠক আনার পালা। মনে রাখবেন একদম নতুন অবস্থায় প্রমোট করতে শুরু করা যাবে না। যদি কোনো পাঠক দেখে আপনার ব্লগে মাত্র দুই-তিনটা পোস্ট ঝুলছে বা পেজগুলো ঠিকভাবে তৈরি করা হয় নি বা ব্রোকেন লিংকে ব্লগ ভর্তি তাহলে সে আর আপনার ব্লগ ভিজিট করতে ইন্টারেস্টেড হবে না।
তো, চলুন এবার দেখা যাক কোথায় কোথায় আপনার ব্লগটির প্রচার চালাবেন।
এসইও
এসইও (SEO) এর পূর্ণ নাম হল Search Engine Optimization. ব্লগিং - এ এই ধাপটি অনেক বড় এবং একটু জটিল তবে ইফেক্টিভ ট্রাফিক বাড়াতে এর কোনো বিকল্প নেই। নিজের সাইট বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন থেকে ট্রাফিক আনার উদ্দেশ্যে অপটিমাইজ করাই হল এসইও। এসইও এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে নিয়মিত পাঠক আনা সম্ভব। এই ধাপ সম্পর্কে আমি পরবর্তীতে আরো আলোচনা করব।
সোস্যাল মিডিয়া
সামাজিক যোগাযোগ সাইটের এই যুগে ব্লগিং প্রোমোশন ধাপটি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। ফেসবুক, টুইটারে নিজ ব্লগ সম্পর্কে আপনার বন্ধুদের বলুন, নিজের পোস্টগুলো শেয়ার করুন। তাদেরকেও শেয়ার করতে উৎসাহ দিন। চাইলে ফ্যান পেজ বা টুইটার একাউন্ট তৈরি করতে পারেন।
ইমেইল মার্কেটিং
আপনার ব্লগের পুরোনো পাঠকদের ধরে রাখার কৌশল হল ইমেইল মার্কেটিং। নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইবার বাড়ার সাথে সাথে আপনার ব্লগের নিয়মিত পাঠক সংখ্যাও বাড়বে। আর ব্লগে ট্রাফিক ধরে রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই।
অন্যের ব্লগে পোস্ট এবং কমেন্ট করা
অন্যের ব্লগে পোস্ট এবং কমেন্ট করার ফলে আপনার ব্লগের দিকে অন্য ব্লগের ব্লগার এবং পাঠকদের নজর পড়বে। তবে সাবধান! স্প্যাম করা থেকে বিরত থাকুন।
গেস্ট পোস্টিং
এটা বেশ ইন্টারেস্টিং। অন্য ব্লগের ব্লগারকে আপনার ব্লগে লিখতে দেয়াটাই হল গেস্ট পোস্টিং। গেস্ট পোস্টিং ব্লগের ট্রাফিক বাড়াতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখে। কারন তখন গেস্টও আপনার ব্লগে ট্রাফিক আনবে।
ফোর্ম সাইট
অনলাইনে প্রচুর ফোর্ম সাইট আছে যেখানে ব্লগের প্রচার চালাতে পারেন। সেই সব সাইটে এমন অনেককেই পাবেন যারা আপনার ব্লগ পাঠ করতে উৎসাহিত বোধ করবে। তাদের সাথে আপনার ব্লগ শেয়ার করে সহজেই ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে পারবেন।
ধাপ - ০৬: ব্লগ থেকে আয় শুরু করা
ভাল পরিমানে ট্রাফিক আসতে শুরু করলে আপনার ব্লগ থেকে আয় করতে শুরু করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন একটি ব্লগে নিয়মিতভাবে পাঠক থাকলেই ভাল পরিমানে আয় করা সম্ভব। তাই যদি ধাপ ৫ ঠিক মত কমপ্লিট না করে থাকেন তাহলে আপনার ব্লগ থেকে আয় করা সম্ভব নয়।
ব্লগ থেকে আয় করার জনপ্রিয় কিছু মাধ্যম সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল।
বিজ্ঞাপন প্রদশর্ন
এটিই সবথেকে জনপ্রিয় মাধ্যম। নিজের ব্লগে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে প্রচুর আয় করতে পারবেন। সাধারণত ব্যানার এবং টেক্স এড শো করে আয় করা হয়।
এফিলিয়েট মার্কেটিং
এফিলিয়েট হল অন্য কোনো কোম্পানির নির্দিষ্ট কোনো পণ্যের প্রচার চালানো। আপনার ব্লগ থেকে কোনো ভিজিটর যদি সেই পণ্যটি কিনে তাহলে আপনাকে কোম্পানি নির্দিষ্ট পরিমাণে লভ্যাংশ দিবে। এটি আয় করার জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।
স্পন্সরড পোস্ট
চাইলে অন্য কোনো থার্ড পার্টির সাথে পার্টনারশিপ করেও আয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে তাদের পণ্য বা সেবা নিয়ে কয়েকটি পোস্ট লিখিতে হবে যাকে বলা হয় স্পন্সরড পোস্ট। প্রতি স্পন্সরড পোস্টের বিনিময়ে তারা আপনাকে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করবে। তবে মনে রাখা উচিত প্রচুর পরিমানে পাঠক না থাকলে আপনার ব্লগের জন্য কোনো থার্ড পার্টি স্পন্সর পাবেন না।
উপসংহার
তবে এখানেই শেষ নয়!
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বাড়ছে অনলাইন থেকে আয় করার সুযোগ। ব্লগিং হতে পারে আপনার আয় করার অন্যতম উৎস। নিজের পছন্দের একটি নিশ বেছে নিয়ে ব্লগিং শুরু করার অর্থ এমন একটি পেশার দিকে অগ্রসর হওয়া যেখান থেকে আপনার কোনো দিনও ছুটি নেয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
আমি এখানে একটি ব্লগ তৈরি করার ধাপগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করলাম। ব্লগিং সম্পর্কে আরো পোস্ট নিয়ে আমি হাজির হব খুব শীঘ্রই। পরবর্তী পোস্টটি আপনার ইনবক্সে পেতে নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন এখনই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন